কক্সবাজার, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

ঈদে পর্যটকদের জন্য প্রস্তুত কক্সবাজার

ঈদে পর্যটকদের জন্য প্রস্তুত কক্সবাজার
রাত পোহালেই ঈদ। প্রতিবছরের ন্যায় এবারো পর্যটকদের বরণে সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছে কক্সবাজার। আলোকসজ্জা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা করে হোটেল-মোটেলগুলোকে সাজানো হচ্ছে নতুন আঙ্গিকে। আগত পর্যটকদের ভালো লাগার জন্য মনোরম পরিবেশ তৈরি করে সবকিছুতেই লাগানো হয়েছে উৎসবের ছোঁয়া।

এদিকে পর্যটকদের বরণে অধিকাংশ হোটেল কর্মচারীর ছুটি হয়নি। ফলে তারা আপনজনদের সঙ্গে ঈদ করতে যেতে পারেনি আপনালয়ে।

এদিকে হোটেল ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশার পুড়া কপাল! এখনো ৩০ শতাংশ রুম বুকিং হয়নি হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউসগুলোর। তারপরও আশা ছাড়ছে না কর্তৃপক্ষ। ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করা হচ্ছে হোটেল কক্ষ, মেঝে, বেলকুনি।

ঈদুল আজহার ছুটিতে হোটেল রুম বুকিংয়ের এমন নিম্নগামীতা হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউস মালিকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। এমন বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধান করতে জরুরি বৈঠকও করেছে হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউস মালিক সমিতি।

বৈঠকে বন্যা এবং পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ায় পর্যটকদের কুয়াকাটা যাওয়ার ইচ্ছাকে কক্সবাজারে হোটেল বুকিং হ্রাসের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে এই দুই কারণে এতোটা বিপর্যয় হতে পারে না বলে মনে করা হচ্ছে। আরো গভীরতর কারণ অনুসন্ধানে দ্বিতীয় দফা বৈঠকে বসবেন নেতারা।

শুক্রবার (৮ জুলাই) দুপুরে শহরের কলাতলী হোটেল-মোটেল জোনে গিয়ে দেখা যায়, কক্সবাজারে অবকাশ যাপনে ভ্রমণপিপাসুদের অনেকে আগাম বুকিং দিলেও বেশিরভাগ হোটেল-মোটেল ও কটেজের রুম এখনো ফাঁকা। হোটেল কর্মচারীদের চোখে মুখে চিন্তার ছাপ। কারণ অন্য ঈদ উৎসবে এমন সময় তারা খুব বেশি কর্মব্যস্ততায় থাকেন। কিন্তু এবারের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। তবে তারা ধারণা করছেন অগ্রিম বুকিং না দিলেও অনেক পর্যটক ঈদের পরদিন থেকে আসতে শুরু করবেন কক্সবাজারে। ফলে তখন কর্মব্যস্ততা বেড়ে যাবে।

হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, বিগত বছরগুলোতে ঈদুল আজহার এক সপ্তাহ আগে কক্সাবাজারের ৪ শতাধিক হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউসের প্রায় শতভাগ কক্ষ বুকিং হয়ে যায়। এমনকি কটেজগুলোতেও বুকিংয়ের হিড়িক পড়ে। কিন্তু এবারের চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো।

তিনি জানান, রাত পোহালেই ঈদ। কিন্তু অনেক হোটেলে কোনো কক্ষ বুকিং হয়নি। যেগুলোতে হয়েছে সেখানে ৩০ শতাংশের নিচে। সর্বসাকুল্যে ২০ শতাংশও হবে না। স্মরণকালে এমন বিপর্যয়ের চিত্র দেখেনি কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবসায়ীরা।

কলাতলীর প্রধান সড়ক লাগোয়া ‘স্বপ্নালয় স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টে’র ইনচার্জ কুতুব উদ্দীন জানান, তাদের হোটেলে ৬০টি কক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১৫টি অগ্রিম বুকিং হয়েছে। এরকম সুপরিচিত হোটেলগুলোতে ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত কক্ষ বুকিং হয়েছে। কিন্তু অনেক হোটেল শূন্য বুকিংয়ে রয়েছে।

হোটেল ‘আইল্যান্ডিয়া’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর নূরুল কবির পাশা জানান, তাদের হোটেলে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত বুকিং শূন্য। একই কথা জানিয়েছেন ‘গ্র্যান্ড সেন্ডি’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর আবদুর রহমানও।

অগ্রিম হোটেল বুকিংয়ের বিপর্যয়ের বিষয়টি এখন কক্সবাজারের পর্যটন অঙ্গনে বেশ আলোচনায়। শুধু হোটেল মালিক নয়; এই নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সবাইকে।

সুগন্ধা পয়েন্টের শামীম গেস্ট হাউসের ম্যানেজার মো. নেজাম উদ্দিন বলেন, ‘এবার ঈদে তুলনামূলকভাবে বুকিং খুবই কম। শুধু আমাদের হোটেলে না, খবর নিয়ে জেনেছি অন্যান্য হোটেলগুলোতেও অগ্রিম বুকিংয়ের বেহাল দশা। এছাড়া ঈদুল আজহার সময় কোরবানি নিয়ে অনেকে ব্যস্ত থাকেন। সেই ব্যস্ততার কারণে তাদের অনেকের হোটেল বুকিং বা ভ্রমণের দিকে তেমন একটা নজর থাকে না। এরপরও যারা কক্সবাজার এসে বেড়াতে চান তারা বুকিং দিয়েছেন।

তিনি বলেন, আশা রাখছি ঈদের পরদিন থেকে পর্যটকে মুখরিত হবে কক্সবাজার। আর আমাদের হোটেল গুলো জমে উঠবে।

ওই হোটেলের কর্মচারী মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘পর্যটক থাকুক আর নাই থাকুক আমাদের কাজ হলো হোটেল ধুয়ে-মুছে প্রস্তুত রাখা। এখন পর্যটক কম হোটেলে তাই বেডশিট, বালিশ কভার, ও মেঝে পরিষ্কার করে রাখছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘গতবার আপনজনদের সাথে ঈদ করলেও এবার ঈদে ছুটি নেই। মালিক জানিয়ে দিলেন, ঈদের পরদিন থেকে পর্যটক আসতে শুরু করবে হোটেলে অনেক সময় দিতে হবে, গেস্টদের সেবা দিতে হবে। এ কারণে এবার মা-বাবা ও স্ত্রী সন্তানদের সাথে ঈদ করতে পারছি না। মালিক যখন ছুটি দিবেন তখন বাড়ি গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সময় দিবো।’

টেকনাফের হোয়াইক্যং থেকে এসে হোটেল কর্মচারীর কাজ করেন মো. সোহেল। তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৭ জন। এবার ঈদে আশা ছিল পরিবার পরিজনের সঙ্গে ঈদ করবেন। কিন্তু হোটেল থেকে ছুটি পাননি তিনি। হোটেলের বুকিং মন্দা-দশায় তার আশা মাটি।

সোহেল বলেন, ‘হোটেলে পর্যটক না হলে তো আমাদের দুর্দশা। মনে করছিলাম রুম বুকিং হবে। কিন্তু কখনো রুম বুকিং হচ্ছে না। হোটেলে গেস্ট আসবে কখন তা নিয়েও চিন্তায় আছি। তারপরও আমাদের আশা পর্যটকরা আসবেন। পর্যটকদের অপেক্ষায় আমরা বাড়ি যাচ্ছি না। যখন পর্যটক বেশি হবে হোটেল থেকে বেতন ভাতা বেশি করে পাবো তখন বাড়ি যাবো।’

পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অগ্রিম হোটেল বুকিং না হওয়া মানে ধরে নিতে হবে এবারে ঈদুল আজহার ছুটিতে কক্সবাজারের স্মরণকালের রেকর্ড কম পর্যটক আসতে পারেন। আবার আবহাওয়াসহ সার্বিক পরিস্থিতি ভালো থাকলে হোটেল বুকিং ছাড়াই আকস্মিক ছুটে আসতে পারেন পর্যটকেরা।

এদিকে পর্যটক আসুক বা কম আসুক; নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখন থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
কক্সবাজারের প্রতিটি পর্যটন স্পটে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে তারা। নিরাপত্তা জোরদারে সব স্পটে লাগানো হচ্ছে সর্তকতামূলক সংকেত ও সাইনবোর্ড।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম জানান, অন্যান্য ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য যেভাবে প্রস্তুতি দরকার এবারও সেভাবে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে পর্যটক আগমণ বাড়বে সে চিন্তা মাথায় রেখে নিরাপত্তা নিশ্চিত ও অপরাধ দমনে কয়েকটি ভাগে সাজানো হয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশকে। টেকনাফ ও ইনানীসহ সব পর্যটন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। প্রয়োজনে জেলা পুলিশের সহযোগিতা নেওয়া হবে।

পর্যটক কম আসলেও পর্যটক বরণে সবসময় প্রস্তুত থাকবে কক্সবাজারের প্রতিটি পর্যটন স্পট। সৈকতের কিটকট ছাতা, বিচ বাইক ও জেটস্কি সাজানো আছে তরে তরে। পর্যটন ব্যবসায়ীদের ধারণা, ঈদুল আজহাকে ঘিরে আরও একবার মুখর হয়ে উঠবে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার।

পাঠকের মতামত: